স্বদেশ ডেস্ক:
বরেন্দ্র এলাকা রাজশাহীর মজাখালে পানি সরবরাহে ৫৭৫ কোটি টাকা খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে। আর এ জন্য সেচকাজ শিখতে বিদেশ ভ্রমণে যেতে চান ১৬ জন সরকারি কর্মকর্তা। রাজস্ব খাত থেকে যাদের জন্য জনপ্রতি ব্যয় হবে ৬ লাখ টাকা। প্রকল্পে তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকায় পাঁচটি গাড়ি ভাড়া করে সেই গাড়ি মেরামতের খরচও হবে ২৪ লাখ টাকা। আর গাড়িচালকের মাসে বেতন ৫৪ হাজার টাকা। তবে এমন ব্যয় প্রস্তাবে আপত্তি পরিকল্পনা কমিশনের।
প্রকল্পটির প্রস্তাবনার তথ্যানুযায়ী, দেশের উত্তর-পশ্চিমাংশে রাজশাহী জেলার গোদাগাড়ি, তানোর ও পবা উপজেলার অবস্থান। অপেক্ষাকৃত শুষ্ক আবহাওযা, উচ্চ তাপমাত্রা, অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং ভূ-উপরিস্থ পানি স্বল্পতা ওই এলাকার প্রধান বৈশিষ্ট্য। এই অঞ্চলে সাধারণত রোপা আমন, আউশ ও স্বল্প পরিসরে রবি শস্যের চাষ হয়। অনেক সময়ই বর্ষা মৌসুম দেরিতে শুরু হওয়ায় আমন ধানের ফলনে বিপর্যয় ঘটে। তাছাড়া ধানের পুষ্পায়নের সময় খরা হলে সম্পূরক সেচের প্রয়োজন হয়। এই সম্পূরক সেচ না দিলে এলাকার আমন ধানও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একইভাবে সময়মতো সেচের অভাবে গমসহ অন্যান্য রবি ফসলের উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফলে ফসলের নিবিড়তা কমে যায়। অথচ পদ্মা নদী থেকে সেচের মাধ্যমে পানি ব্যবহারের ব্যবস্থাপনা নিলে ওই এলাকায় সারা বছর ফসল উৎপাদন করা সম্ভব। তাই ১৮ কিলোমিটার দূর থেকে পাইপলাইনের মাধ্যমে পানি এনে খালে স্থানাস্তর করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এটা করা হলে সোয়া ১০ হাজার হেক্টর জমিতে সারা বছর সেচের সুবিধা সৃষ্টি হতে পারে। পদ্মা পাড় থেকে এলাকার সরবরাহ পয়েন্ট ৩৫ মিটার বা প্রায় ১১৫ ফুট উঁচু।
এ দিকে ব্যয় পর্যালোচনায় দেখা যায়, সেচসহ মেইন বুস্টার পাম্প সম্পর্কে ধারণার জন্য ১৬ জন কর্মকর্তা বিদেশে প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন। যাদের জন্য মাথাপিছু ৬ লাখ টাকা হিসেবে ৯৬ লাখ টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে বিষয়টি পর্যালোচনা করতে বলছে পরিকল্পনা কমিশন।
মজাখালের ১২০ কিলোমিটার পুনঃখননে ৮২ কোটি ৫৩ লাখ টাকার প্রস্তাব করা হয়েছে। এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে প্রায় ৬৯ লাখ টাকা। কিন্তু চলমান সমজাতীয় প্রকল্পে এ খাতে খরচ ৩০ লাখ ১১ হাজার টাকা। প্রকল্পের জন্য পাঁচটি জিপগাড়ি ভাড়া করতে হবে। তার জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৪৮ লাখ টাকা। অথচ এই খরচে চারটি গাড়ি কেনা সম্ভব। আবার এই গাড়িগুলো মেরামতে ২৪ লাখ টাকা যাবে। পেট্রল ও লুব্রিকেন্ট খাতে ৯৩ লাখ টাকা। গাড়ি চালকের বেতন মাসে ৫৪ হাজার টাকা। এ ছাড়া ৫০ হাজার টাকা দরে কেনা হবে মিটার। যাতে ৩২০টির জন্য ব্যয় এক কোটি ৬০ লাখ টাকা। আর ১০টি কালভার্ট নির্মাণে খরচ ৩ কোটি ৭০ লাখ টাকা। প্রতিটির নির্মাণখরচ ৩৭ লাখ টাকা।
কিন্তু পরিকল্পনা কমিশনের সেচ উইং বলছে, একনেকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৫০ কোটি টাকার বেশি ব্যয়ের কোনো বিনিয়োগ প্রকল্প হলে তার জন্য আবশ্যিকভাবে নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্ভাব্যতা যাচাই করতে হবে। এই প্রকল্পটি ৫৭৪ কোটি টাকার বেশি। কিন্তু নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দ্বারা সম্ভাব্যতা যাচাই করা হয়নি। তাই নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান দ্বারা গভীর সম্ভাব্যতা যাচাই করে নতুন করে ডিপিপি দাখিল করতে হবে। এছাড়া কমিশন প্রশ্ন তুলছে, আউটসোর্সিং করা গাড়ি ভাড়ায় এত টাকা কেন। আবার সেগুলো মেরামতের খরচও সরকারের কেন। পাশাপাশি জ্বালানি ও চালকের বেতন নিয়ে কমিশনের আপত্তি। এগুলো রাষ্ট্রীয় অর্থের অপচয়।